বিতর্ক কি ?
বিতর্ক হচ্ছে নিজস্ব মতামত, যুক্তি এবং বক্তব্যের মাধ্যমে কোন একটা বিষয়ে নিজের অবস্থানকে দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করা। বিপক্ষের অবস্থান দুর্বল করে নিজের মতামতকে প্রতিষ্ঠিত করা।

মানুষের জানার আগ্রহ ,বলবার প্রয়াস, মেনে না নেওয়ার দৃঢ়তা ,মতামত প্রতিষ্ঠা ও একান্ত অনুগত না হওয়ার প্রবল প্রত্যয় বিতর্কে মানুষকে উৎসাহিত করে। সভ্যতার একেবারে শুরু থেকেই মানুষ বিতর্ক করে আসছে। এখনো মানুষের মধ্যে বিতর্ক চলমান আছে।
বিতর্কের উৎস এবং উৎপত্তি নিয়ে বিভিন্ন মতামত এবং মতভেদ রয়েছে তবে আধুনিক বিতর্কের গৌরব যাত্রা শুরু ইংল্যান্ড থেকে। তা খুব দ্রুততার সাথে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
বিতর্ক মানেই অনর্গল বক্তব্য দেওয়া নয়। বিতর্কের সাথে বক্তব্যের একটা ভালো রকম পার্থক্য আছে। বিতর্কে একটি ফলাফল থাকে। নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর যুক্তি দিয়ে ,অপর পক্ষের যুক্তি খন্ডন, উদাহরণ এবং দৃষ্টান্তের যৌক্তিক স্থির অবস্থান বিতর্ককে মহিমান্বিত করেছে।
বিতর্কে ধ্রুব সত্য বলে কিছু নেই। বক্তব্য এবং যুক্তির অনেক সময় ধ্রুব সত্য কে বিতর্কে হারিয়ে দেয়। মোদ্দাকথায় আপনি আপনার ক্ষুরধার বক্তব্য, যুক্তির নিরন্তর প্রবাহ এবং বাচনভঙ্গি দিয়ে হাজার বছরের সত্য কে বিতর্কে হারাতে পারেন। আবার আপনি ধ্রুব সত্যের পক্ষে থেকে বিতর্ক করলে, দুর্বল যুক্তিকে যদি অপরপক্ষ ভেঙ্গে চুরে চুরমার করে দেয় আপনার সত্য পক্ষের বিতর্ক মুখ থুবড়ে পড়বে। এটাই বিতর্কে সৌন্দর্য। দিনশেষে যুক্তি এবং দৃষ্টান্তের জয়জয়কার।
বিতর্ক মানে জ্বালাময়ী বক্তব্য দেওয়া নয়। বিতর্কে আপনি কত ভালো বলতে পারেন সেটার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আপনি কত যৌক্তিকভাবে ভাল বলতে পারেন এবং আপনার যুক্তিগুলোর মান কেমন। আপনি খাপছাড়া ভাবে অনেক জোরালো বক্তব্য দিয়ে বক্তা হতে পারবেন। কিন্তু বিতার্কিক না। বক্তা এবং বিতার্কিক সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়।
বিতর্ক কিন্তু একটা দলের সাথে আরেকটা দলের। হতে পারে আপনি ব্যক্তিগতভাবে অনেক ভাল একজন বিতার্কিক। কিন্তু আপনি যদি দলীয়ভাবে ভালো কৌশল দেখাতে না পারেন তাহলে দল হিসেবে আপনি বিতর্কে হেরে যাবেন। দিনশেষে বিতর্কে জয়ী আর পরাজিত হিসেবে কিন্তু দলের নাম লেখা হয়। কোন ব্যক্তির নয়।
বিতর্ক মানেই প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহ। যুক্তি দাঁড় করানো এবং অপর পক্ষের যুক্তি খন্ডন করা, ভেঙেচুরে দেওয়া এটাই বিতর্কের অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য।
বিতর্ক প্রতিযোগিতা ছাত্র-ছাত্রীদের জ্ঞানের ভান্ডারকে বিকশিত করে। সেই সাথে একজন শিক্ষার্থীকে নেতৃত্বদানের যোগ্যতা তৈরী করতে সাহায্য করে। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই স্কুল-কলেজে-বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে বিতর্ক প্রতিযোগিতা। শুধু তর্কের খাতিরে তর্ক নয়, অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় আলোচনা সমালোচনা হয়।

একটি যুক্তিবাদী সমাজ বিনির্মাণে বিতর্কের বহুল চর্চা এবং প্রচার প্রয়োজন। এই সময়ে আমাদের প্রয়োজন একটি যুক্তিবাদী প্রজন্ম। চাই বোধের নবজন্ম।
~ মোহাম্মদ আনিসুল ইসলাম